যশোর জেলার ৮টি উপজেলার শত শত হেক্টর জমির ধানের শীষ পাতাব্লাস্টের আক্রমণে মরে যাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানীর ওষুধ ছিটিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় মরতে বসেছে সব ফসল। এখনই এ ছত্রাক দমন করতে না পারলে ধান সম্পূর্ণ চিটা হলে চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করছেন এ অঞ্চলের চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। যশোর জেলার ৮টি উপজেলায় এক লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৬ হাজার হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ২১ হাজার হেক্টর, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১৯ হাজার হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ১৮ হাজার হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ১৪ হাজার হেক্টর, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর, মণিরামপুর উপজেলায় ২৮ হাজার হেক্টর এবং কেশবপুর উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোরের ঝিকরগাছার বল্লা, বোধখানাসহ কমবেশি প্রায় সব ধানক্ষেতে এ ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটানোর পরও ক্ষেতের অবস্থা ভালো হচ্ছে না। ব্রি-৮১, ব্রি-২৮, ভারতীয় হাইব্রিড জাতের শুভলতা ধানে এ ছত্রাকের আক্রমণ সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে। ফলে বোরো ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা।
মণিরামপুর উপজেলার সরসকাঠি গ্রামের কৃষক আতিয়ার জানান, এবার আড়াই বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছেন। এর মধ্যে একবিঘা জমির ধানে ব্লাস্ট ছত্রাকে আক্রমণ করেছে। অনেক ওষুধ ছিটিয়েও তেমন লাভ হচ্ছেনা।
ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের চাষি আব্দুস সালাম জানান, চলতি মৌসুমে ২৪ শতক জমির বোরো ধানক্ষেত এ ছত্রাক আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটানোর ফলে ক্ষেতের অবস্থা কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণত এবার ব্রি-৮১, ব্রি-২৮ ও ভারতীয় হাইব্রিড জাতের শুভলতা ধানে এ ছত্রাকের আক্রমণ বেশি দেখা দিয়েছে। সময়মতো উদ্যোগ না নিলে জমির প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ ধানের শীষ এতে মারা যায়।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, উচ্চতাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশি হলে এ ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তবে ছত্রাকনাশক প্রয়োগে তা রোধ করা সম্ভব। ঝিকরগাছায় এটি এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, যশোরে চলতি মৌসুমে এবার বোরো আবাদ ভালো হয়েছে। ধানের আবাদের শুরতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তেমন রোগ বালাই দেখা না দিলেও, ধানের শীষ বের হওয়ার সাথে সাথে শীষে পাতাব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। তবে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে।
আবহাওয়াজনিত কারণে কিছু কিছু জমিতে ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতির কোনো নেই বলে দাবি করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।